রানা প্লাজার দৈবক্রমে বেঁ’চে যাওয়া রেশমা এখন কোথায়

রানা প্লাজা ট্র্যা’জেডি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রা’ণহা’রি শিল্পদু’র্ঘটনা বলা হয়ে থাকে একে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে সংঘ’টিত এ দু’র্ঘটনা ও দু’র্ঘটনাস্থলের হাহাকার চিত্র কাঁ’দিয়েছে সারা বিশ্বকে।

আবার সবাইকে বি’স্মিত করেছে দু’র্ঘটনার ১৭ দিন পর ধ্বং’সস্তূপ থেকে এক ত’রুণীর জী’বিত উ’দ্ধারের ঘ’টনা। বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া সেই রেশমা বেগম এখন কেমন আছেন, কী করছেন?

রানা প্লাজা ধ’সের ঘ’টনায় সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের এক-চতুর্থাংশের ভা’গ্যে জুটেছে মৃ’ত্যু, কেউ বা হয়েছেন প’ঙ্গু। সেদিনের ভ’য়াল সেই স্মৃতি আর শারীরিক ক্ষ’ত নিয়ে বেঁ’চে আছেন অনেকে জীবন্মৃত হয়ে। সেদিক থেকে ভাগ্যবতী রেশমা।

মৃ’ত্যুকূপ থেকে বেঁ’চে ফেরার পর সুখময় স্বপ্নের মতো জীবন পাল্টে যায় দিনাজপুরের ত’রুণীর। কীভাবে পাল্টে যায়, সে কথাও আমরা অনেকে জানি। নতুন প্রজন্ম হয়তো সেভাবে জানে না। সেনাবা’হিনী ও ফা’য়ার সার্ভিসের উ’দ্ধারকর্মী আর শত শত মানুষের আ’ল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্য দিয়ে রেশমাকে উ’দ্ধারের ঘ’টনার চিত্র এখনো চোখে ভাসে অনেকের।

এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। কিছুদিনের চিকিৎসা শে’ষে সেরে ওঠেন রেশমা। সারা দেশ এমনকি বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠে রেশমা নামটি। তার দুয়ারে চাকরি নিয়ে হাজির হয় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। রেশমাকি এখনো আছেন এই হোটেলে?

রেশমার স’ঙ্গে যোগাযোগের চে’ষ্টা করা হয়। তার দেখা পাওয়া যায়নি। টেলিফোনেও ধ’রা যায়নি তাকে। তবে রেশমা এখনো ওয়েস্টিনেই আছেন, ভালো আছেন- এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওয়েস্টিনের জনসংযোগ বিভাগের কর্মক’র্তা সেহরিনা ওয়াহিদ বলেন, রানা প্লাজার ধ্বং’সস্তূপ থেকে দৈবক্রমে বেঁ’চে যাওয়া রেশমা গত আট বছর ধ’রে কাজ করছেন হোটেল ওয়েস্টিনে।

তিনি এখন এই হোটেলের একজন দক্ষ কর্মী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল পৌনে নয়টায় ধ’সে পড়ে নয়তলা রানা প্লাজা, যার বৈধ অ’নুমোদন ছিল পাঁচতলা। একটি ছাদের ওপর আরেকটি ছাদ ভে’ঙে পড়ে। এই ধরনের ধ’সকে বোঝাতে স্যান্ডউইচের উদাহরণ দেওয়া হয়।

রানা প্লাজার এই ধ্বং’সস্তূপে চাপা পড়ে মা’রা যান ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক। অ’ঙ্গহানি ঘ’টে শতাধিক। এ ছাড়া আরও প্রায় তিন হাজার শ্রমিক আ’হত হন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধ’রে চলা উদ্ধা’রকাজের সময় প্রায় প্রতিদিন লা’শ মেলে ধ্বং’সস্তূপে। কিন্তু জী’বিত উ’দ্ধার ছিল না বেশ কিছু দিন আগে থেকে।

ঘ’টনার ১৭ দিন পর যখন আর কেউ ওই ধ্বং’সস্তূপের ভেতর জী’বিত নেই বলে ধারণা করা হচ্ছিল, ঠিক তখনই ভেতরে প্রা’ণের অস্তিত্ব মেলে। নিচ তলার কিছু অংশে ছাদ আর ফ্লোরের মাঝে এক কোনায় ফাঁ’কা জায়গায় এক ত’রুণরি কণ্ঠ।

সেখান থেকে জী’বিত উ’দ্ধার করা হয় রেশমাকে। আবেগ আপ্লুত হন উ’দ্ধারকর্মী, উপস্থিত লোকজন, গ’ণমাধ্যম কর্মী এবং টিভিতে দেখা কোটি কোটি দর্শক।

এ ঘ’টনার মাস দুয়েক পর ২০১৩ সালের জুন মাসের শে’ষদিকে পাবলিক এরিয়া অ্যাম্বাসেডর পদে রেশমাকে নিয়োগ দেয় হোটেল ওয়াস্টিন ক’র্তৃপক্ষ। তার বেতন ধরা হয় ৩৫ হাজার টাকা। শুরুতেই তাকে ১০ মাসের বেতন অগ্রিম দেয়া হয়।

৬ মাসের প্রশিক্ষণ শে’ষে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হোটেল কাজ শুরু করেন রেশমা। এখন ইংরেজিতে কথা বলা, দক্ষতার সঙ্গে কম্পিউটার চালানো- পাঁচ তারকা হোটেলের একজন চৌকস কর্মী হয়ে ওঠেন তিনি। তার চালাফেরা, কথাবার্তা, আচরণ সবকিছুই এখন এক ভিন্ন রেশমাকে উপস্থাপন করে। বেড়েছে মর্যাদাও। তার কাজে ওয়েস্টিন ক’র্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।

রানা প্লাজায় চাকরি করার সময় রেশমা তার বড় বোনের স’ঙ্গে সাভারে থাকতেন। তার বোন এখনো সাভারের বাসিন্দা। সেখানে মাঝেমধ্যে যাতায়াত আছে রেশমার। আর রেশমা থাকেন গুলশানে একটি ভাড়া বাসায়।

ওয়েস্টিনে কাজ শুরুর কিছুদিনের মধ্যে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রেশমা। তার স্বামী হানিফ সাভারে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জে’লায়। এর আগে রেশমা ২০০৯ সালে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজে’লার আবদুর রাজ্জাকে নামের একজনের স’ঙ্গে বিয়ে করেছিলেন।

প্রে;মের সেই বিয়ে দুই বছরের মা’থায় বি’চ্ছেদে গড়ায়। জীবিকার তাগিদে বোনের স’ঙ্গে ঢাকায় আসেন রেশমা। ঢাকার জী’বনের শুরুতে রেশমা রাজধানীর এক ব্যাংক কর্মক’র্তার বাসায় কাজ নেন। সেখান থেকে সাভারে গার্মেন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কাজ শুরুর কিছুদিনের মা’থায় ঘ’টে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি।

দিনাজপুর জে’লার ঘোড়াঘাট উপজে’লার কশিগাড়ীর রানীগঞ্জ গ্রামের রেমমারা তিন বোন ও দুই ভাই। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রেশমা। রেশমার বাবা আনছার আলী যখন মারা যান তখন রেশমার বয়স এক বছর।

পরে রেশমার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। রানা প্লাজার ঘ’টনার পর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া টাকা ও রেশমার দেয়া টাকায় বাড়িতে পাকা দালান তুলেছেন তারা।

সূত্র : ঢাকা টাইমস